যে নারীর পায়ের নিচে জান্নাত—তাঁকে শুধু একটি দিনে বন্দী করে রাখো না

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ বিশ্বময় আজ মাতৃভক্তির আনুষ্ঠানিকতা। ফুলের তোড়া, পোস্টের বহর, নকল আবেগের প্রদর্শনী। অথচ যাঁর স্তব্ধ ভালোবাসায় গড়ে ওঠে মানবতা, যাঁর নিঃশব্দ কান্নায় হয় সভ্যতার সূচনা, সেই মাকে মনে রাখা হয় শুধুই একটি দিনে? এত সংকীর্ণ আমাদের ভালোবাসা?

ইসলাম এমন একটি আদর্শ যে নারীর মর্যাদা ঘোষণা করে তখন, যখন সমাজ তাকে জীবন্ত কবর দিত। মরুপ্রান্তরের রুক্ষ বাতাসে যখন কন্যাসন্তান জন্ম এক অভিশাপ, তখন ইসলামের কণ্ঠে উঠে আসে মুক্তির জয়ধ্বনি—“মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত।”

এ শুধু একটি ধর্মীয় বাণী নয়, এ এক বৈপ্লবিক প্রতিজ্ঞা। পৃথিবীর কোনও সংবিধান, কোনও সভ্যতা, কোনও নারীবাদী ভাষ্য—মায়ের এমন আত্মমর্যাদা ঘোষণা করতে পারেনি, যতটা করে ইসলাম।

রাসূল সা.—যিনি নারীকে ‘রহমত’ বলে সম্বোধন করেন—তাঁর মুখে এক অমর বাণী:

“তোমার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?”

“তোমার মা।”

“এরপর কে?”

“তোমার মা।”

“এরপর?”

“তোমার মা।”

তারপর তবে আসে পিতা।

এ এক ত্রিস্তরের সম্মান। ইসলাম নারীর সম্মান শুধু মুখের বুলি নয়—এ এক বিধাতার দেয়া মর্যাদা, আসমানি ঘোষণা।

মা—একজন নারী যিনি নিজেকে প্রতিদিন ভেঙে নতুন করে গড়েন সন্তানের জন্য, রাতের নিদ্রা বিসর্জন দিয়ে হাসি খুঁজে দেন মুখে, নিজে ক্ষুধার্ত থেকে তুলে দেন শেষ লোকমাটি।

ইসলাম বলেনি, ‘তাঁকে বছরে একদিন স্মরণ করো’। বরং বলেছেন, ‘তাঁর চরণতলে খুঁজে নাও জান্নাতের ঠিকানা।’

আধুনিক বিশ্ব যেখানে নারীকে স্বাধীনতার নামে ভোগ্যবস্তু বানিয়ে ছেড়েছে, সেখানে ইসলাম তাঁকে দিয়েছে পূর্ণ মর্যাদার স্বীকৃতি—একজন মা, একজন আদর্শ নির্মাতা, একজন প্রজন্মশিল্পী।

আজকের এই মা দিবসে আমাদের প্রয়োজন—ফুল নয়, ফেসবুক নয়—প্রয়োজন সত্যের কাছে ফেরা। ফেরার সেই নীতিতে, যেখানে নারী মানেই নিঃস্বার্থ, মা মানেই মহিমা।

আসুন, আমরা একটিবার ভাবি—একজন মায়ের যে পায়ের নিচে জান্নাত, তাঁকে কেবল একটি দিনে সীমাবদ্ধ করেতে কি আমাদের আত্মা কাঁপে না? আমরা কি সত্যিই ভালোবাসি, নাকি ভালোবাসার অভিনয় করি?

মাকে ভালোবাসা মানে ধর্মকে ভালোবাসা, জান্নাতকে ভালোবাসা। মায়ের সম্মান শুধু আবেগ নয়, এটি ঈমানের প্রমাণ।

লেখক,শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো,মিশর

✆ +201503184718

Post a Comment

Previous Post Next Post