অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন এমন কাজ করছে যা দেশের অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি- ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র শ্রমিক জনতা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “দুনিয়া হতে তুমি তোমার অংশ ভুলে যেওনা। আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেওনা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।” (পবিত্র সূরা আল কাসাস শরীফ: আয়াত শরীফ নং-৭৭)। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক এক করে এমন সব উদ্যোগ গ্রহণ করছে ও কার্যক্রম করছে যেগুলো বাস্তবিক অর্থে দেশ ও জনগণের পক্ষে নয়, বিপক্ষে। সরকার দেশের জনগণের অধিকার হরণ করছে এবং দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে অথবা ভুল বুঝিয়ে সরকার যেসব কার্যক্রম করছে সেই সব কার্যক্রমের কোনটি সম্মানিত পবিত্র রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম বিরোধী, কোনটি ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী, কোনটি কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী, কোনটি সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী অপশক্তির এজেন্ডার বাস্তবায়ন, কোনটি দেশ বিক্রির চক্রান্ত, কোনটি দেশের মানুষকে দরিদ্র করে রাখার কুটকৌশল। দেশের মানুষের ঈমানী মূল্যবোধের সাথে জড়িত, দেশের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার সাথে সাথে জড়িত অথবা দেশের অর্থনীতি এবং দেশের মানুষের রুটি রুজির সাথে জড়িত সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। দেশের এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ নিয়ে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা। সরকারীভাবে এই দ্বীপটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং সরকারীভাবে সেখানে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে। কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ অনুসারে, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান-এইগুলি একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারী নিষেধের কারণে নারিকেল দ্বীপের মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

নারিকেল দ্বীপে প্রায় ১০ হাজারের অধিক লোকের বসবাস। এই দ্বীপ নিয়ে সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে দ্বীপবাসীসহ সারা দেশবাসীর মাঝে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ, আতঙ্ক আর হতাশা। প্রথমে সরকার মিয়ানমারের আরাকান সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতির অজুহাতে নারিকেল দ্বীপের সাথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। অথচ নাফ নদী দিয়ে নারিকেলদ্বীপে যাতায়াত না হলেও বঙ্গোপসাগর দিয়ে জাহাজে নারিকেল দ্বীপে পর্যটক যাতায়াতে কোন ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে না। এছাড়াও গেল পর্যটন মৌসুমে কোন কারণ ছাড়া হঠাৎ করে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেই নারিকেল দ্বীপের সাথে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে পর্যটন ব্যবসায়ী, জাহাজ কোম্পানী ও নারিকেল দ্বীপের অধিবাসীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন চলছে সাগরে ৫৮ দিনের মাছধরার নিষেধাজ্ঞা। এতে করে দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন বেকার। দ্বীপে এখন বিরাজ করছে চরম দুর্ভিক্ষ। সরকার ইচ্ছ করেই মানুষের উপর এমন জুলুম করছে, মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার হরণ করছে। এছাড়াও নারিকেল দ্বীপ বাংলাদেশের ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও এই দ্বীপের অধিবাসীদেরকে উপজেলা প্রশাসন এবং কোস্টগার্ড থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এমনকি যাদের আত্নীয়-স্বজন ওই দ্বীপে বসবাস করে তারাও দ্বীপে যেতে পারছেনা। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সরকার কি উদ্দেশ্যে এই দ্বীপের মানুষকে মানুষ মনে করছেনা সেটা বোধগম্য নয়। এসব জুলুমের কারণে নারিকেল দ্বীপের অনেক মানুষ তাদের ভিটামাটিতে থাকতে পারছেনা। খাদ্য,বস্ত্র এবং চিকিৎসার অভাবে নারিকেল দ্বীপের লোকজন টেকনাফ, কক্সবাজার বা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জুলুমের কারণে নারিকেল দ্বীপ যেনো দ্বিতীয় গাযায় পরিণত হচ্ছে- যেখানে ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবাধিকারের বিপর্যয় হয়েছে। এই জুলুম সহ্য করার মত নয়। জাতির চোখকে ধোকা দিয়ে কি উদ্দেশ্যে এই জুলুম চালানো হচ্ছে, কাদের স্বার্থে এই জুলুম চালানো হচ্ছে- এটা আমরা দেশবাসী জানতে চাই। অবিলম্বে এই জুলুম বন্ধ করতে হবে। নারিকেল দ্বীপ ও দ্বীপের জনগনকে রক্ষা করতে হবে। জালিমের হাত থেকে মজলুমকে রক্ষা করা মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় নারিকেল দ্বীপের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেনা। হঠাৎ কাউকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারে জরুরীভাবে নিতেও পারছেনা। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে দ্বীপের মানুষকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা দ্বীপ খালি করার কৌশল কিনা? এভাবে নারিকেল দ্বীপ কোন বিদেশী অপশক্তির হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে কিনা? এটা কি দেশ বিক্রির কূটকৌশল কিনা? বাংলাদেশের ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও এই দ্বীপ এবং এর অধিবাসীদের নিয়ে সরকারের এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়া পরিবেশবাদের ঠুনকো অজুহাতে এই সিদ্ধান্ত কেনো? এটা কিছুতেই বরদাশত করা যায়না।

সম্প্রতি দ্বীপবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে সাথে সরকারের করিডোর দেওয়ার যে পরিকল্পনার কথা ইতিমধ্যে জানা গেছে এর সাথে নারিকেল দ্বীপের কোন যোগসূত্র আছে কি-না এবিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। করিডোর বা চ্যানেল বা প্যাসেজ দিয়ে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিরা এসে এই দ্বীপ দখল করে নিতে পারে। এই জন্যই কি এই দ্বীপ জনশূন্য করার চক্রান্ত চলছে? শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমানের এই দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্রের অংশ এটা কিনা- তা বোধগম্য নয়।

আমাদের দাবী- (১) একজন বাংলাদেশী নাগরিক সারা দেশে যেভাবে যখন খুশি, তখন ভ্রমণ করতে পারে। ঠিক তেমনি নারিকেল দ্বীপেও সারা বছর মানুষ ভ্রমণ করতে পারবে, পর্যটক যাতায়াত করতে পারবে; কোনো প্রকার বাঁধা দেয়া যাবেনা। (২) এই দ্বীপে জাহাজ বা ট্রলার যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে। (৩) এই দ্বীপে যেতে প্রশাসন বা কোস্ট গার্ডের অনুমতি নেয়ার নিয়ম বাতিল করতে হবে। এটা কি অন্য কোনো দেশ যে সেখানে যেতে হলে ভিসা নিতে হবে? পর্যটনকেও বাঁধা গ্রস্থ করা যাবেনা। (৪) সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। (৫) এই দ্বীপের মানুষের খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা, বস্ত্র, প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী এবং বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মৌলিক অধিকার বা হক্ব অবশ্যই পূরণ করতে হবে। (৬) কোনো বিদেশী অপশক্তির কাছে এই দেশ বা দেশের কিয়দংশ বিক্রি করা যাবেনা বা ইজারা দেয়া যাবেনা। এই দেশের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। নতুবা দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নেমে যাবে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে।

পরিবেশ দূষণের ভূয়া অজুহাতে যদি নারিকেল দ্বীপে মানুষের যাতায়াতকে বাঁধা দিতে হয় বা নারিকলে দ্বীপকে খালি করতে হয় তাহলে তো রাজধানী ঢাকাকে আরো দ্রুত খালি করতে হবে। কারণ দূষণের দিক থেকে ঢাকা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দূষিত শহর। 

আমরা জানি বহু আগে থেকেই নারিকেল দ্বীপের উপর সম্রাজ্যবাদী বিদেশী অপশক্তির কু-দৃষ্টি রয়েছে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা যখন সেই দ্বীপে নিয়মিত যাতায়াত করবো তখন সেখানে জনবসতি বাড়বে, পর্যটন শিল্প বাড়বে, তখন সম্রাজ্যবাদী অপশক্তির সেই ইচ্ছায় বাধা পড়বে। তাই নারিকেল দ্বীপে নিয়মিত বাংলাদেশীদের যাতায়াত এবং সেখানে মানুষের বসবাস বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরী। কিন্তু সেটা না করে দ্বীপটিতে যদি বাংলাদেশী শূণ্য করার অপপ্রয়াস করা হয়, তবে সেটা সম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থই রক্ষা করবে।  

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ৯ মতে, কাউকেই খেয়াল খুশী মত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না। ধারা ১৩ তে বলা হয়েছে, নিজ রাষ্ট্রের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার প্রত্যেকের‌ই রয়েছে। কাজেই, নারিকেল দ্বীপে যেতে বাধাপ্রাপ্ত করা জাতিসংঘ গৃহীত ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২, ৩, ৯ ও ১৪ ধারার লঙ্ঘন। অতএব, সরকারকে অবশ্যই দ্বীপবাসী ও বাংলাদেশের সকল নাগরিককে নারিকেল দ্বীপ ভ্রমণ, অবস্থান ও চলাচলের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কোনো রকম বাধা দেয়া যাবে না।

 পরিবেশবাদের নাম দিয়ে যারা পরিবেশ দূষণের কথা বলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ করতে চায়, দেশের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করতে চায়, ব্যবসার ক্ষতি করতে চায়, মানুষের জীবিকার পন্থাকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চায় অর্থাৎ এই দেশের অর্থনীাত ও জনগণকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চায় তারা বিদেশী অপশক্তির দালাল। এদরকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সরকার যদি জনগণের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করে তাহলে জনগণ বিগত পতিত সরকারর মতই এই সরকারকেও উৎখাত করতে দ্বিধা করবেনা।

Post a Comment

Previous Post Next Post