চর ভূরুঙ্গামারী স্কুলে দায়িত্বহীনতায় ল্যাবের কম্পিউটার চুরি: শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ

ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় 'চর ভুরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়'টি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ও এমপিওভুক্ত হলেও নানান অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে, যে কারণে শিক্ষা কার্যক্রম নানা ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলার মামলায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মোঃ সদরুল আলম মন্ডলকে ১৯ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার অনুপস্থিতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ এনামুল হক দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষক তাকে মানতে নারাজ। এ বিষয়টি সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক স্বীকার করেন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে কোন পরিচালনা কমিটি না থাকায় প্রশাসনিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও অন্যান্য সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনিও নিয়মিত খোঁজখবর নিতে পারেন না। 

অত্র বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষকের মধ্যে পুরুষ ১৪ জন, মহিলা ৪ জন, কর্মচারীদের মধ্যে পুরুষ ৫ জন, মহিলা ১ জন। তবে শিক্ষার্থীদের সঠিক সংখ্যা জানতে চাইলে শিক্ষকরা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শিক্ষা অফিস থেকে নিতে বলেন।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ শনিবার খোলা রাখার নির্দেশ দিলেও চর ভুরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সেই নির্দেশও মানা হয়নি। গোপন সূত্রে জানা যায়, টানা দুই শনিবার বিদ্যালয়টি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে কোন নোটিশ করা হয়নি। সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।  

তারা বলেন হেড স্যারের নির্দেশনা আছে, উনার একটা সম্মিলিত ছুটি থাকে তো, সেক্ষেত্রে তিনি একটা দিন ছুটি রাখতে পারেন।

অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকগণ সঠিক সময়ে ক্লাস নেন না এবং দেরিতে স্কুলে আসেন। এছাড়া বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩ টার মধ্যেই স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ এনামুল হক বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম পিরিয়ডের ক্লাস অন্যান্য পিরিয়ডের সময় আমরা শিক্ষকরা অন-ক্যাপাসিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করি। 

জানা যায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের ল্যাবে ১১টি কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, প্রায় ছয় মাস পূর্বে ল্যাব রুমের তালা ভেঙে কম্পিউটারগুলো চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আল হেলাল মাহমুদ বলেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।

উপরোক্ত বিষয় তথ্য নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে অফিস সহকারী ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

বিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বলেন, শনিবারে ক্লাস নেওয়া হয়নি বিষয়টি তিনি জানেন, প্রধান শিক্ষক গ্রেপ্তার থাকায় এ্যাডহক কমিটির বিষয়ে তিনি জানেন না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ল্যাব আছে কিনা কিংবা ল্যাবের কম্পিউটার চুরি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না। শনিবার ক্লাস না নেওয়া ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদানের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন বলে জানান তিনি।

Post a Comment

Previous Post Next Post