নিজস্ব প্রতিবেদনঃ গত ২৭শে এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেছে, রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর তৈরি করতে চায় জাতিসংঘ। এ বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের মানুষের কাছে গোপন করে ভিতরে ভিতরে এভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব,স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার অধিকার সরকারের নেই। এই মানবিক করিডোর যে আসলে কতটা অমানবিক; দেশ ও জাতির এবং ইসলাম ও মুসলামানের জন্য প্রাণঘাতী তা শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলামানের এই দেশের মানুষ বেখবর। দেশের মানুষের এবং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ রক্ষায় ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মানবিক করিডোর নামক এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি।
মানবিক করিডোর দিলে আসলে কী কী সমস্যা হবে? তা একটু স্পষ্ট করা দরকার।
১। ত্রাণ বা চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্রে হামলা করে জান-মাল লুটপাট করার নজির আরাকান আর্মি ও মায়ানমারের জান্তা সরকার উভয়েরই আছে। সুতরাং বাংলাদেশের ভেতর করিডোর দিলে বাংলাদেশেও হামলা আসতে পারে। তাই করিডোর দেয়া মানে মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশের ভেতর টেনে আনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা।
২। মানবিক করিডোর যে শুধু মানবিক সামগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তার নিশ্চয়তা দিবে কে? এই তদারকি কে করবে? বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুই কলেজের মধ্যে মারামারির মত একটা ছোট ঘটনা সামাল দেয়ার সক্ষমতা বর্তমান সরকারের নাই। সেই দুর্গম এলাকায় কে তদারকি করবে, যে মানবিক করিডোর সামরিক করিডোর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কী না? যেমন বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় মানবিক করিডোরের ইতিহাস রক্তাক্ত ইতিহাস। সেখানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানবিক করিডোর। এবং পরবর্তীতে তা সেব্রেনিকাতে মুসলিম গণহত্যার কারণ হয়েছিলো।
৩। এই করিডোর দিলে বাংলাদেশ আমেরিকার প্রক্সি ওয়ার জোনে পরিণত হবে। এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে খর্ব করতে আমেরিকার কয়েকটি পলিসি আছে। যেমন- চীনের বেল্ট রোড ইনেশিয়েটিভ পলিসির বিরুদ্ধে আমেরিকার ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, পিভট টু এশিয়া পলিসি আছে। তাই বাংলাদেশের দ্বারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ গতিশীল হলে, তার খেসারত বাংলাদেশকে ভয়াবহভাবে দিতে হবে। তখন চীন,রাশিয়া, ভারত ও আমেরিকা চলে আসবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য। তখন বাংলাদেশ হয়ে যাবে প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র। যেভাবে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ধ্বংস হয়েছে আফগানিস্তান, ইউক্রেন ও ভিয়েতনাম, ঠিক তেমন। বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল মুসলিম রাষ্ট্রকে তথাকথিত শক্তিধর কাফির রাষ্ট্রগুলোর প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি করবে। তখন তার দায়-দায়িত্ব কী অন্তর্বর্তী সরকার নিবে ?
৪। রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যাকারী বৌদ্ধ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে পরেনা। এখনও আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণশহীদ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও এক লাখ ৩০ হাজার নির্যতিত রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এসেছে। সেক্ষেত্রে আরাকানে ত্রাণ পাঠালে মুসলিম বিদ্বেষী আরাকান আর্মির সন্ত্রাসীরা তা কিছুতেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিবেনা। বরং ত্রাণ লুট করবে আর অস্ত্র শস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করবে।
৫। এই করিডোরের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশ ‘মানবিক করিডোর সহায়তা’ দিয়ে শক্তিশালী করলে, সেই শক্তির চর্চা যে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিবে? যেহেতু বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা নিয়ে তাদের পৃথক রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা আছে। এই করিডোর মূলত ইহুদি এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ। ইহুদিদের কল্পিত গ্রেটার ইসরাঈলের কুপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমান দেশসমূহের মাঝে যেমন একটি বিষফোড়া এই পরগাছা দখলদার ইসরাইল। ঠিক তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম দেশ গুলোর মাঝে আর একটা পরগাছা বিষফোড়া তৈরী হবে। ভারতের মিজোরাম, মণিপুর, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মায়ানমারের আরাকান নিয়ে আর একটি জুলুমবাজ ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রথম ধাপ হচ্ছে এই করিডোর- যা ইহুদি জর্জ সারোসের একটি পুরাতন পরিকল্পনা।
৬। এই করিডোরের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পরে। আমেরিকান প্রশিক্ষণ, অস্ত্র এবং লজিস্টিক সহায়তা পেয়ে পার্বত্য উপজাতি সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হবে, বাঙালি মুসলমানদের গণহত্যা করবে, উচ্ছেদ করবে এবং পূর্ব তিমুর বা দক্ষিণ সুদানের মত পৃথক রাষ্ট্র দাবী করবে।
৭। এখানে বিশ্ব সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী আমেরিকার অস্ত্র বিক্রি হবে এবং এর লাভ দিয়ে গাজাবাসী হামাসবাসী সহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের উপর জুলুম করবে। আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসাকে সহজ করার জন্য আগেভাগেই স্টারলিংক ঢোকার কাজ শেষ করেছে সরকার। স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে আরাকান আর্মির ড্রোন রাখাইনেতো অবশ্যই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলকেও বিচ্ছিন্ন করার কাজে ব্যবহার হবে। তখন মুসলমানেরা বাধ্য হয়ে পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে সমতলে নেমে আসবে। যেভাবে ইহুদিরা গাজার মুসলমানদের নিজ ভুখন্ড থেকে বিতাড়িত করছে ঠিক সেই ভাবেই পাহাড়ের মুসলমানদের বিতাড়িত করবে।
৮। গাজায় মুসলমানেরা তীব্র ক্ষুৎ-পিপাসায় মারা যায় অথচ তাদেরকে মানবিক ত্রাণ দেয়ার চিন্তা জাতিসংঘ ওরফে ইহুদি সংঘ করেনি। এখন তারা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মুসলমানের শত্রু আরাকান আর্মিকে ত্রাণ দিতে চায়। আসলে এই মানবতার অজুহাতে তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করতে চায়। নারিকেল জিনিজিরা দ্বীপে আমেরিকান সেনাদের ঘাটি করতে চায়। রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে চায়। যদি তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তা করতেই চায় তাহলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করা উচিত এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদেরকেই ত্রাণ দেয়া উচিত। তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আরাকানে পাঠানো উচিত। যেনো রোহিঙ্গারা তাদের ভুখন্ড স্বাধীন করে বসবাস করতে পারে। আর আরাকানে ত্রাণ পাঠাতে চাইলে রাখাইনের কায়ুকফায়ুতেই তো রয়েছে চীনের গভীর সমুদ্র বন্দর। তাছাড়াও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে তৈরী হচ্ছে ভারতের গভীর সমুদ্র বন্দর। ভারত ও চীনের এই দুটি গভীর সমুদ্র বন্দর দিয়েই তো খুব সহজেই জাতিসংঘ রাখাইনে ত্রাণ পাঠাতে পারে। কিন্তু তা না করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ঘুরিয়ে আরাকানে ত্রাণ পাঠানোর মানে কি? এটা যে খুবই খারাপ উদ্দেশ্য তা সহজেই বুঝা যায়। জাতিসংঘ বৌদ্ধ মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে সাহায্য করতে বাংলাদেশে করিডোর চাচ্ছে, কিন্তু তারা বৌদ্ধ মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে নির্যাতন বন্ধ করতে বলতে পারছে না, এটা কেমন কথা? এখনও বৌদ্ধ মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিরা প্রতিদিন রোহিঙ্গা মুসলমানদের শহীদ করে যাচ্ছে, মুসলমানদের বাড়ি-ঘর, জান-মাল, ইজ্জত-সম্ভ্রম সব লুট করে যাচ্ছে, বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এই মগ সন্ত্রাসী, মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ আরাকান আর্মিকে কোন ভাবেই সহায়তা করার অর্থ হলো দেশের সাথে, জাতির সাথে, মুসলমানদের সাথে মুনাফিকি ও প্রতারণা করা। আসলে এই মানবিক করিডোরের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে সাম্রাজ্যবাদীদের দখলদারী ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
Post a Comment