বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে ঢালাই! প্রকৌশলী বললেন, অনিয়ম হলে আমার কি করণীয়?

নিহারেন্দু চক্রবর্তী,নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গত পাঁচদিন দেশের অধিকাংশ এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টির মাঝেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সড়কে দেওয়া হয়েছে ঢালাই। তদারকিতে ছিল না উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কেউ। তিনদিন না যেতেইে ভেঙে যাচ্ছে সড়কের বিভিন্ন অংশ, উঠতে শুরু করেছে ইটের গুড়া। গত ২৯ ও ৩১ মে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম মৃধাকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়দের দাবী, উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশেই সড়কের কাজে অনিয়ম করছে ঠিকাদার।

তীব্র বৃষ্টির মধ্যেই হয়েছে সড়কের ঢালাইয়ের কাজ। এতে সাত লাখ টাকা বরাদ্দের সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে সচেতন মহল শঙ্কা প্রকাশ করছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের উপর মেজাজ হারিয়ে ফেলেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম মৃধা। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশের কথা অস্বীকার করলেও অনিয়মের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান। পাশাপাশি “অনিয়ম হলে আমার কী করণীয়?’ এমন মন্তব্যও করেন তিনি।

এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সড়ক ঢালাইয়ে জন্য সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তামান্না এন্টারপ্রাইজ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মধ্যে সড়কটিতে ঢালাই শুরু করে ঠিকাদারের লোকজন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্ব ঘোষিত বৃষ্টির সম্ভাবনার মধ্যেই এভাবে ঢালাই শুরু করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিবাকর ভাট বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম মৃধাকে অবগত করেন। পরে ৩১ মে শনিবার আবারও বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই দেওয়া হয়। বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই দেওয়ার ফলে ধুয়ে গেছে সিমেন্ট, ভেসে উঠেছে ইটের কণা। 

এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মিনার চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির মধ্যেই ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এভাবে যদি অনিয়ম করে সড়কে কাজ করা হয়, তাহলে এই সড়ক বেশিদিন টিকবে না। তিনদিনও হয়নি উঠে যাচ্ছে ইটের কণা, সব সিমেন্ট বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে। আমরা চাই এটি আবার নতুন করে করা হোক। তবে প্রশাসনের উচিত ছিল কাজগুলো সঠিকভাবে তদারকি করা। ঢালাই চলাকালে আমরা কাউকে এই কাজের তদারকিতে ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কাউকে দেখি নাই।

সাবেক ইউপি সদস্য ফুল বাহার বলেন, 'সরকার কি বড় বড় গরু কিনবার লাইগা টাকা দেয়? হাসপাতালের সড়কটা কয়টা দিন আগে বা পরে করলে কি হইত? বৃষ্টির মাঝে করল কেরে? কামডা খুব খারাপ হইছে। সরকারের টেহা এমনে লুটলে দেশ কেমনে সামনে আগাইব? ইঞ্জিনিয়াররা কি করে? 

স্থানীয় বিএনপি নেতা সাখাওয়াত ভুঁইয়া বলেন, 'বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই দিছে। সিমেন্ট সব সাথে সাথে বৃষ্টির পানিতে ধুইয়া গেছে গা। একবারে নিম্নমানের কাজ হইসে এখানে। তিনদিন হয়নাই ঢালাই দিসে, এখনি সব ভাইঙ্গা যাইতাসে। এরা ঢালাই দেওয়ার সময় ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কেউ এখানে ছিল না। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের একটা পিয়ন দেখসি একদিন একটু সময় খাড়াইয়া ছিল। পরে দেখলাম ঠিকাদারের এক লোকের দেওয়া একটা পান চাবাইতে চাবাইতে চইলা গেল। আমরা যেটা খবর পাইসি, নাসিরনগরের বর্তমান ইঞ্জিনিয়ার ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল। তার বিরুদ্ধে মাধবপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন করসিল, এর পরে তাকে নাসিরনগর পাঠাইসে।'

কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী প্রকৌশলী ইসহাক মিয়া বলেন, প্রথমদিন হাসপাতালের সড়কে ঢালাইয়ে আগে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেদিন হালকা বৃষ্টির মধ্যে ঢালাই চলছিল, পরে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় ঐদিন কাজ বন্ধ করে ঢালাইয়ের উপর পলিথিন দিয়ে রাখা হয়। পরে অভিযোগ পেয়ে আমরা একদিন কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। একদিন পর আবার বাকি অংশটুকু ঢালাই করা হয়, সেদিনও বৃষ্টি ছিল। এখন কাজে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটি আমরা দেখব।

কাজে অনিয়ম ও সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম মৃধা বলেন, কাজে অনিয়মের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানা লাগবে। অনিয়ম হলে কি করণীয় এমন কথা আমি বলিনি। আমি বলছি, এখন কি করণীয়। কাজে অনিয়ম হলে কি করণীয় এটা কি গণমাধ্যম কর্মী ঠিক করে দিবে? এমন প্রশ্ন জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ নির্ধারণ করে দিবে উনি। 

অনিয়মের বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)শাহীনা নাছরিন বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, কয়েকজন আমাকে ফোনেও ঐ কাজের বিভিন্ন অসংগতির কথা জানিয়েছে। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অশোভন আচরণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, একজন কর্মকর্তা আসলে এভাবে কথা বলতে পারেন না। এবিষয়ে আমি খোঁজ নিচ্ছি।

Post a Comment

Previous Post Next Post