জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন: বাংলাদেশে পরবর্তী সংকটের সূচনা?

জাতিসংঘ (UN) — এই নামটি শুনলেই অনেকে ভাবেন, মানবতা, অধিকার, শান্তি। কিন্তু সত্যিই কি জাতিসংঘ সেসব আদর্শ বাস্তবায়ন করে? না কি এটি এক ধরনের ছদ্মবেশী উপনিবেশিক শক্তি, যাদের কাজ হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোকে “মানবাধিকার”, “গণতন্ত্র”, “নারী স্বাধীনতা”, “সংখ্যালঘু অধিকার” — এসবের নামে দুর্বল করে ফেলা?

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR)-এর মিশন চালুর ঘোষণা অনেকেই উদযাপন করলেও, বাস্তবতা হলো—এটি হতে পারে একটি গভীর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের সূচনা। নিচে দেখে নিই, এতে কী কী বিপদ ঘটতে পারে, এবং কেন এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া জরুরি।

১. রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ
জাতিসংঘের এই দপ্তর তথাকথিত “মানবাধিকার লঙ্ঘন” চিহ্নিত করতে এসে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগের কাজ নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

রেফারেন্স: ইরাক ও আফগানিস্তানের কথাই ধরুন। জাতিসংঘ ও আমেরিকার যৌথ “মানবাধিকার রিপোর্ট”-এর মাধ্যমে এসব দেশের অভ্যন্তরে তথাকথিত ‘অসঙ্গতি’ দেখিয়ে সামরিক আগ্রাসনের যুক্তি তৈরি হয়েছিল। আজ সেসব দেশ বিধ্বস্ত।

২. ইসলামি আন্দোলন ও চিন্তাকে ‘উগ্রবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করার পথ সুগম
OHCHR-এর আগের বহু রিপোর্টে ইসলামপন্থী দল, খিলাফতপন্থী চিন্তা, এমনকি হিজাব ও শরিয়া নিয়ে আলোচনা—এইসবকেই ‘র‌্যাডিকাল’ বা ‘চরমপন্থা’ বলে বিবেচনা করা হয়েছে।

রেফারেন্স: জাতিসংঘের Counter-Terrorism Strategy অনুযায়ী, “ধর্মীয় আইডিওলজিকে কেন্দ্র করে সংগঠিত কার্যক্রম” অনেক সময়েই ‘অবজারভেশনের বিষয়’।

ভারত, মিসর ও তুরস্কে ইসলামপন্থীদের দমন নিয়ে UN তেমন কিছু বলেনি, কিন্তু যখন তারা রাষ্ট্রীয় পলিসি চ্যালেঞ্জ করে, তখন ‘আন্তর্জাতিক উদ্বেগ’ তৈরি হয়।

প্রশ্ন: তাহলে ইসলামি দলগুলো কি আর রাজনীতি করতে পারবে? খিলাফত বা শরিয়া নিয়ে কথা বললে কি সেটা হবে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’?

৩. আন্তর্জাতিক এনজিও ও মিডিয়ার সহায়তায় রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা
এই ধরনের মিশনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি এনজিও, মিডিয়া ও তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা অর্ধসত্য ও পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট তৈরি করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপপ্রচার চালায়

উদাহরণ: মিয়ানমারে জাতিসংঘের রিপোর্টগুলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্য দিলেও কখনো সামরিক দমননীতির মূল পৃষ্ঠপোষকদের নাম নেয়নি।

শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই-এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে মানবাধিকারের ভাষায় ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

৪. পরিবার ও সামাজিক কাঠামো ধ্বংসের পেছনে কাজ করতে পারে
“মানবাধিকার”, “নারী স্বাধীনতা”, “লিঙ্গ পরিচয়”, “বৈচিত্র্য” ইত্যাদি শব্দ দিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এমন নীতিমালা চাপিয়ে দেয়, যা ইসলামী সমাজ কাঠামোকে ধ্বংস করে দেয়।

রেফারেন্স: সিডও (CEDAW) কনভেনশন জাতিসংঘের নারীবিষয়ক চুক্তি, যেখানে ইসলামি হিজাব, পুরুষের নেতৃত্ব, শরিয়া ভিত্তিক পরিবারব্যবস্থা—এসবকে সমালোচনা করা হয়।

তাহলে কি মুসলিম পরিবারকে ভেঙে “উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট” বানানো হবে? শিশুদের শেখানো হবে, তারা ছেলে না মেয়ে সেটা নিজেরা ঠিক করবে?

৫. পরবর্তী চাপ: ‘ইউন বেইসড ইন্টারভেনশন’?
জাতিসংঘ অনেক সময় মিশনের মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতিকে ‘ক্রাইসিস’ ঘোষণা করে। এরপর আসে সামরিক হস্তক্ষেপ বা বিদেশি তদারকি।

ইরাক (2003): প্রথমে জাতিসংঘ এসেছিল অস্ত্র তদারকি করতে। পরে বলা হলো ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হচ্ছে। তারপর শুরু হলো আগ্রাসন।

লিবিয়া (2011): মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের রিপোর্টের ভিত্তিতে নেটো হামলা হয়, আর গাদ্দাফি খুন হন।

জাতিসংঘ নয়, আমাদের দরকার শরিয়াভিত্তিক স্বশাসন ও জবাবদিহি। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মানে গোপন এজেন্ডা, পক্ষপাতদুষ্ট নজরদারি এবং ইসলামি চিন্তার প্রতি শত্রুতামূলক অবস্থান। আমাদের দরকার একটি সত্যিকারের জবাবদিহিমূলক ইসলামি রাষ্ট্র, যেখানে মানবাধিকার অর্থ হবে আল্লাহর নির্ধারিত হক আদায়, পশ্চিমা শাস্তি বা ইচ্ছেমতো অধিকার নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post