সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল আলম বাবলুর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।
২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হলে, ২৩ মার্চ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ৬ মাস পর ২০ জুলাই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে একটি কমিটি।
তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কালিগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আবুল হাসানকে আহ্বায়ক করে এবং শ্যামনগরের নকিপুর সরকারি হরিচরণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেনকে সদস্য করে।
তদন্তের সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রী আছিয়া, মরিয়ম, লামিয়া এবং চাকরির বিনিময়ে ঘুষ দেওয়া বিভিন্ন কর্মচারীরা। তারা লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি ভিডিও ও ছবি পেনড্রাইভে জমা দেন। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদুন্নবীসহ একাধিক শিক্ষক ও এলাকাবাসী দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগ অনুযায়ী:
প্রধান শিক্ষক বাবলু ২০১৮ সালে প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ পান।
নিরাপত্তা কর্মী মনিরুল ইসলাম (৭ লক্ষ), ফরিদ উদ্দিন (৯ লক্ষ), আজিজুর রহমান (৯ লক্ষ), নৈশ প্রহরী ইয়াসিন (৫ লক্ষ), সহকারী শিক্ষক মাহমুদুন্নবী (৬ লক্ষ)–এদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার লিখিত স্বীকারোক্তি রয়েছে।
বিদ্যালয়ের কাগজপত্র নিজের দখলে রেখে দলীয় ক্যাডার দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখান।
অতীতে ছাত্রীর গর্ভপাত ঘটিয়ে বরখাস্ত হন, পরে টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিবাহিত এক ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
৩০ অক্টোবর ২০২৪ সালে নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় ১৮ নভেম্বর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা হয়।
জনরোষ ও আন্দোলন
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত মে মাসে গঠিত প্রাথমিক তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আকরাম হোসেন মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরব। কিছু অংশের তদন্ত এখনও বাকি আছে।”
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, ২০১৭ সালে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকে সভাপতি বানিয়ে বাবলু নিজে প্রধান শিক্ষক হন এবং বিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ঘাঁটিতে পরিণত করেন।
Post a Comment