সিফাত রানাঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা, “কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার” ২০২১ সালে এই উপজেলায় যোগদানের পর নিজের শ্রম, মেধা, কৃষকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। কৃষি বিষয়ক যে কোন প্রয়োজনে, পরামর্শে ও সহায়তায় তাকে সবসময় পাশে পেয়েছেন এই উপজেলার কৃষকরা।
হতদরিদ্র অনেককে কৃষি প্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। রাত কিংবা দিন সর্বক্ষণ কৃষি ও কৃষকদের নিয়েই ভাবেন এ কর্মকর্তা। তাইতো তিনি অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা, ব্যতিক্রম। নিজের কাজের মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ কৃষকের প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন। একজন সরকারি কৃষি কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক, বন্ধু বা তাদের প্রিয় মানুষ হতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ এ কর্মকর্তা।
কর্তব্য ও দায়িত্বের প্রতি অবিচল থেকে কৃষকদের উন্নয়নে রাত দিন কাজ করে গিয়েছেন। এজন্যই তিনি অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক সম্পর্ক স্থাপন ও কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কৃষকদের করেছেন আধুনিকায়ন। বাড়তি আয়-রোজগারের পাশাপাশি অনেক কৃষক কে করেছেন স্বাবলম্বী।
ভার্মি কম্পোস্ট বা (কেঁচো সার) ব্যবহার ও উৎপাদন, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে ব্যাগিং পদ্ধতি, মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ, মালচিং পদ্ধতিতে হলুদ তরমুজ চাষ, পলিনেট হাউসে উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন জাতের নতুন নতুন আম বাগান তৈরি, নতুন নতুন জাতের পেয়ারা বাগান ও মাল্টা বাগান তৈরি, ডাম সিডার দিয়ে বপন পদ্ধতিতে ধান আবাদ, ছাদ বাগান, ড্রাগন চাষ, উচ্চ ফলনশীল ভিয়েতনামী নারিকেল, বারো মাসি সজিনা ও মচির চাষ এবং খামারজাত সার সংরক্ষণ (গোবর সংরক্ষণ) প্রভৃতি কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের আধুনিক করেছেন।
ফেসবুকে “কৃষি অফিসার গোমস্তাপুর” আইডির মাধ্যমে জনসাধারণকে কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আসছেন।
কৃষকের কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য খুলেছেন কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
সপ্তাহের সাতদিনই সকল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিনামূল্যে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন। এক গ্রামের কৃষকদের সাথে অন্য গ্রামের কৃষকদের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক নিত্য নতুন প্রযুক্তি, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের কেঁচো সার উৎপাদনে এসএসিপি রেঞ্জইচ প্রকল্পের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট বা (কেঁচো সার) উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করে দিয়েছেন, এবং এই উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতিমাসে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা।
কেঁচো সার উৎপাদন করে এ উপজেলার কৃষকরা সফলতা অর্জন করেছেন। কুয়েত প্রবাসী এক ছেলে ভার্মি কম্পোস্ট করে সংসারে স্বচ্ছলতার আনার পাশাপাশি, কর্মসংস্থান করেছেন দশ জনের। এছাড়া এ উপজেলার শতশত কৃষাণ-কৃষাণি তাঁর পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এখন স্বাবলম্বী।
গোমস্তাপুর ইউনিয়নের চাইপাড়া গ্রামের গরুর খামারি আব্দুল আলিম রিপন বলেন, আমার গরুরর খামারের গরুর গোবর যেখানে সেখানে ফেলে দিতাম, এখন আর ফেলতে হয় না। কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে কৃষি অফিসের সহায়তায় গোবরের জন্য ঘর তৈরি করে সেখানে গোবর দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করছি এবং আমার এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রি করি। কয়েক বছর আগে এ ইউনিয়নের কৃষকরা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল ফলাতেন, কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার শিখিয়েছেন মাটির প্রাণ জৈবসার তৈরি ও ব্যবহার।
রাধানগর ইউনিয়নের কৃষক শাহীন আলম নামে এক কৃষককে পরামর্শ দিয়ে অফ সিজনের তরমুজ চাষ করিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অফ সিজনে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য ও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন ওই চাষী।
পার্বতীপুর ইউনিয়নের কৃষক ফাইজুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালে আমি তানভীর স্যারের পরামর্শে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। জমিতে কেঁচো সার ব্যবহারে ব্যাপক সাফল্য পাই। পরে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করতে থাকি। এভাবে আমি পর্যায়ক্রমে লাভবান হতে থাকি।
রহনপুর ইউনিয়নের বংপুর গ্রামের ফুল চাষি সাদিকুল ইসলাম টুটুল বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমি বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু করি কিন্তু করোনা মহামারিতে আমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, পরে কৃষি অফিসার তানভীর স্যারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আমি একজন সফল ফুল চাষী, আমার এখানকার উৎপাদিত ফুল জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়, বিদেশি ফুল চাষ করার জন্য সরকার থেকে আমাকে পলিনেট হাউস দেওয়া হয়।
অনেক কৃষক-কৃষাণিকে কৃষি প্রযুক্তিতে সম্পৃক্ত করে বাড়তি আয় রোজগারের মাধ্যমে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, তানভীর আহমেদ সরকার একজন দক্ষ ও পরিশ্রম। তার নেতৃত্বে গোমস্তাপুর উপজেলার অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে।
রহনপুর ইউনিয়নের কৃষি উদ্যোক্ত শামীম রেজা এসএসিপি রেইঞ্জ প্রকল্প থেকে তিন লাখ টাকার কৃষি যন্ত্রাংশ অনুদান পায়। এসব কৃষি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হবে এবং কৃষি ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন হবে। এভাবে তিনি নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যে এ এলাকার কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখে চলেছেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির মুন্সি বলেন, তানভীর আহমেদ সরকার একজন দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী অফিসার। তার সহযোগিতা গোমস্তাপুর উপজেলায় কৃষিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমি আশা করি কৃষি সম্প্রসারণে তিনি আরও ব্যাপক অবদান রাখবেন।
Post a Comment