হাফিজুর রহমান কালীগঞ্জ প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জর্জ আদালতের নির্দেশ অমান্য করায়, কারণ দর্শানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির হোসেন এবং কনস্টেবল কামরুল ইসলাম নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে এ যাত্রায় রেহাই পেয়েছে। উপজেলার চাম্পাফুল কালিবাড়ী গ্রামের সুনীল মন্ডলের দায়ের করা দেওয়ানি ৪৮৮/২০২১ নং মামলায় একই গ্রামের আব্দুস সামাদ গাজীর পুত্র আলমগীর হোসেনের ক্রয়কৃত দখলীয় ১.৩৩ একর জমিতে সিনিয়র সহকারি জর্জ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অযাচিত হস্তক্ষেপের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত গত মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ২৪ ঘন্টার কারণ দর্শানোর নোটিশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মোঃ তরিকুল ইসলামের আদালতে ঐ ২ পুলিশ কর্মকর্তা হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে আদালত তাদেরকে রেহাই দেন।
শনিবার সরেজমিনে চাম্পাফুল গ্রামে গেলে আব্দুস সামাদ, আলমগীর হোসেন, কমল মন্ডল, সুনীল মণ্ডল শ্রীকান্ত , উদয়, মাধবীলতা সহ একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানায় চাম্পাফুল গ্রামের মৃত জ্ঞানেন্দ্র মন্ডলের পুত্র রণজিৎ মন্ডলের নিকট হতে তার চাচাতো ভাই কমল মন্ডল চাম্পাফুল মৌজার এস, এ ২৩৩,২৫২ নং খতিয়ানের ৯১,৮৮ লাগে ১.০৮ একর জমি গত ২১/৭/১৯৮০ ইং তারিখে ৬১২৭ নং দলিলে বিক্রি করে। এরমধ্যে ১ একর জমি সরকারের অর্পিত বা ক " তফসিলভুক্ত সম্পত্তি। উক্ত অর্পিত বা ক" তফসিল সম্পত্তি নিয়ে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন ট্রাইব্যুনালে গত ২৩/৭/২০১২ ইং তারিখে ১৮১০/১২ নং মামলার প্রেক্ষিতে গত ৬/৮/২০১৮ রায় এবং ১২/৮/২০১৮ ডিগ্রী লাভ করে। উক্ত রায়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন ট্রাইব্যুনালে গত ২৩/৯/২০১৮ ইং তারিখে ৬৭/২০১৮ নং আপিলের প্রেক্ষিতে পরাজিত হয়ে গত ১৪/৫/২০১৯ ইং তারিখে কমল মন্ডল রায় পায়। এ প্রেক্ষিতে কমল মন্ডল ২৪৫৩/ ২০২১-২২ নং কেসের মাধ্যমে নিজ নামে ১ একর জমি নামজারি করে নেয়।
উক্ত জমি হতে গত ২১/৭/২০২২ ইং তারিখে ৪১৩৮ নং দলিলে ৬৬ শতক জমি আলমগীরের নিকট বিক্রি করে দেয়। আলমগীর সেটা ১১৫৩/২০২২-২৩ নং নামজারি কেসের মাধ্যমে নিজের নামে করে নেয়। কমলের কাকা নব কুমারের পুত্র হাজারি লাল মন্ডলের স্ত্রী কৌশলা রানী মন্ডল গত ২৩/৩/২০০৮ ইং সালে ৯১৬ নং দানপত্র মূলে কমলের পুত্র তাপসের নামে লিখে দেয়। উক্ত সম্পত্তি ৪৪৬২/২০২১ নং কেসের মাধ্যমে নামজারি করে তাপস গত ২০/১১/২০২৩ ইং তারিখে ৬৩৬৪ নং দলিলে আলমগীরের নিকট বিক্রি করে। আলমগীর তার ২ টি দলিলে ক্রয় কৃত ১.৩২ একর জমি ভোগ দখল করে আসছে। অপরদিকে একই গ্রামের মৃত সন্ন্যাসী মন্ডলের পুত্র সুনীল মণ্ডল হাজারী লালের নিকট থেকে গত ২৮/২/২০০১ ইং তারিখে ৯৮০ নং দলিলে ৪১ শতক জমি ক্রয় করে। সুনীল তার চাচাতো ভাই কমল সহ অন্যদের ২.০২ একর সম্পত্তি নিজের দাবী করে তার স্ত্রী মাধবী লতাকে দিয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় পিটিশন ৬৫২/২০১৩ নং মামলা সহ একাধিক মামলা করে হয়রানি করে আসছে। এবং মামলা গুলো মিথ্যা বলে আদালত খারিজ করে দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এরপরও থেমে থাকেনি সুনীল। সুনীল ঐ সমুদয় সম্পত্তি তার নিজের দাবি করে কালীগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে গত ৩০/৮/২০২৩ ইং তারিখে নিষেধাজ্ঞা দাবি করে দেওয়ানি ৩১৪/২০২৩ নং করলে বিজ্ঞ আদালত না মঞ্জুর করে দেন। পুনরায় আলমগীরের জমিতে রাইস মিল উচ্ছেদের জন্য গত ২/১২/২০২১ ইং তারিখে দেওয়ানী ৪৮৮/২০২১ নং মামলা দায়ের করে। যার ধার্য দিন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর। তার আগে আলমগীর তার কেনা জমিতে গত মঙ্গলবার ঘেরা দিতে গেলে সুনীল জবর দখলের অভিযোগে এনে স্থানীয় এবং উপজেলা ,জেলা প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে সাংবাদিকদের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়ি দখল, ধর্ষণ ,খুন ,পূজা মন্ডপ ভাঙ্গার মতন স্পর্শকাতর ভুল তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম ব্যবহার করে নিজের ফয়দা লোটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত ভুল তথ্যে এবং ভুল সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ যেয়ে আদালতের রোষানালে পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি থানা প্রশাসনের জানা ছিল না বলে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী সুনীল মন্ডলের বাড়িতে যেয়ে জানতে চাইলে তিনি তার স্বপক্ষে জমির কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অপরদিকে ক্রয় সূত্রে জমির মালিক আলমগীর হোসেন এ প্রতিনিধিকে জানান সে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ন্যায্য টাকা দিয়ে জমি কিনে ভোগ দখলে আছে। সুনীলের ৪১ শতক জমি অন্য দাগে অন্য জায়গায় থাকায়, আমার জায়গা দখলের জন্য বিভিন্নভাবে পায়তারা চালাচ্ছে । স্থানীয় চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইনের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানান তবে বৃহস্পতিবার সুনীল মন্ডল বেলা ২ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে যেয়ে জানালে বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে কাগজপত্র দেখে জানানোর কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই।
তবে জমি জবর দখলের অভিযোগ এবং মোবাইলে জানালে ঘটনাস্থলে আমি পুলিশ পাঠাই। কিন্তু সেখানে পূর্ব থেকে আদালতে মামলা আছে কিনা বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ যেয়ে এখন আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্ষমা চাইতে হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কালিগঞ্জ শাখার নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন