সরোয়ার-মাহতাবকে প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনা: ২৫০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা | ১৭ আগস্ট ২০২৫ (রবিবার)
দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন ও আসিফ মাহতাব উৎসকে প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনায় উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন ২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, সম্প্রতি সংঘটিত এক গভীর উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয় ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাফওয়ান চৌধুরী রেবিল নামক জনৈক ট্রান্সজেন্ডার ‘Antarctica Chowdhury’ নামে পরিচালিত তার একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আইইউবি-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লেকচারার আসিফ মাহতাব উৎস-এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনা প্রদান করেছে। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে নৃশংস ও অমানবিক চিত্র ব্যবহার করে দুইজন শিক্ষকের শিরচ্ছেদকৃত মাথা ও বিকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদর্শন করে কিছু পোস্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যার ভাষা ও উপস্থাপনা সরাসরি হত্যার উস্কানি প্রদান করে। এই কর্মকাণ্ড শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং দেশের সামাজিক স্থিতি, আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্যও এক ভয়াবহ হুমকি। এ ধরনের প্রকাশ্য হত্যার প্ররোচনা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ধারা ২৬ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৫০৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হত্যার প্ররোচনা এবং হুমকির হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন এবং আসিফ মাহতাব উৎস থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আমরা যথাযথ তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি।’

‘ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন একজন খ্যাতিমান লেখক, সমাজসেবক ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষক, যিনি বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (বিআরএফ)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়া, ডেঙ্গু ও শিশুদের স্থূলতা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অপরদিকে, আসিফ মাহতাব উৎস একজন সাহসী শিক্ষক ও জনপ্রিয় বক্তা, যিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। তারা উভয়েই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় সর্বদাই অবিচল থেকেছেন।’

তারা বলেন, ‘একজন চরমপন্থী কর্তৃক দেশের দুইজন সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনা প্রদান অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং একটি সভ্য সমাজে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এটি কেবল দুইজন শিক্ষকের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং স্বাধীন ও দায়িত্বশীল মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার প্রশ্নও বটে। দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে যা দেশের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সাফওয়ান চৌধুরী রেবিল – যে নিজেকে সাহারা চৌধুরী নামে পরিচয় দিয়ে ট্রান্সনারী হিসেবে প্রকাশ করে থাকে – সিলেটের মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। প্রকাশ্যে হত্যার প্ররোচনার বিষয়টি অবগত হওয়ার পর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত করা হয়। এটি একটি ভালো উদ্যোগ, কিন্তু যথেষ্ট নয়। এই চরমপন্থী সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য।’

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, ‘আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর আহ্বান জানাই—অবিলম্বে চিহ্নিত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ ধরনের নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সাহস না পায়।’

বিবৃতি প্রদানকারী ২৫০ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন— ৭৫ জন প্রফেসর, ৪৪ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ৬৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ৬৬ জন লেকচারার।

বিবৃতি প্রদানকারীদের মাঝে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন, সাস্টের ১৬ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন, বুটেক্সের ১৪ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন, বুয়েটের ২ জন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ১২ জন সহ অনান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষকগণ রয়েছেন। বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষকদের বিস্তারিত তালিকা www.mullobodh.com ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিপ্রদানকারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম, বুটেক্সের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল ইসলাম, ডুয়েটের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীমা তাসনীম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান, মেডিকেল কলেজ ফর ওমেন অ্যান্ড হসপিটালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মিলিভা মোজাফফর, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ইফতেখারুল ইসলাম ইমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খো. লুৎফুল এলাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারীসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।

২৫০ জন শিক্ষকের নামের তালিকা নিচে সংযুক্ত করা হলো:
https://mullobodh.com/statement-3/

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন