আশিকুল ইসলাম, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার চর দশশিকা গ্রামসহ আশেপাশের প্রায় দশটি গ্রাম এখনও মৌলিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ—প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের মানুষ বছরের পর বছর ভোগান্তি সহ্য করে আসছেন।
সেতু পরিকল্পনা, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই ২০১৭ সালে ফুলঝোর নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘ প্রায় ১০ বছরেও কাজের অগ্রগতি হয়নি। স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে একজন প্রকৌশলী এসে মাটির পরীক্ষা (সয়েল টেস্ট) করেছিলেন। সেখানেই সব শেষ—এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে দেননি। স্থানীয় সূত্র বলছে, চর দশশিকা গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন এ অনিয়মে জড়িত ছিলেন।
সেতু না থাকায় স্থানীয়দের জীবনযাত্রা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে।
স্বাস্থ্যসেবা জরুরি রোগী বা প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে নেওয়া যায় না সময়মতো। এম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারে না। একাধিকবার নৌকা সংকটে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
শিক্ষা স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের নদী পার হতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষাকালে ঝুঁকি আরও বাড়ে।
সামাজিক সমস্যা গ্রামের বেহাল অবস্থা দেখে অনেক সময় কনে বা বর পক্ষ বিয়ে ভেঙে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফুলঝোর নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবিতে স্থানীয়রা বারবার উপজেলা, জেলা প্রশাসন এমনকি মন্ত্রণালয়েও আবেদন করেছেন। সেতু মন্ত্রণালয় পর্যন্ত লিখিত আবেদন গিয়েছে। সাবেক এমপি ড. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বহুবার এলাকা সফর করে সেতুর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।
গত বছর এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এলাকাবাসীর আকুতি চর দশশিকা গ্রামের মানুষদের একটাই দাবি—“ফুলঝোর নদীর উপর দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।” গ্রামবাসীর ভাষায়, “স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যদি আমাদের এমন ভোগান্তিতে থাকতে হয়, তবে স্বাধীনতার আসল সুফল আমরা কোথায় পেলাম?”
এখন দেখার বিষয়—সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবে গ্রামীণ মানুষের এই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন