ত্রিপুরার বিকৃত মানচিত্রে 'বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম'ভারতের যে ষড়যন্ত্রের অংশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫(বুধবার)
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে আবারও অস্থিরতার ছায়া। এবার সেই ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগকে কেন্দ্র করে। ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মার সাম্প্রতিক ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ মানচিত্র প্রকাশ - তা শুধু একটি অবিবেচক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নয়, বরং বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে কেন্দ্র করে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থান্ধ কৌশলেরই নোংরা বহি:প্রকাশ।

গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ (অনস্ক্রিণ গ্রাফিক্স)

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম কোনও বিচ্ছিন্ন এলাকা নয়। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর, যা বাংলাদেশের বাণিজ্যশক্তির হৃদপিণ্ড। তাই রাজা প্রদ্যুতের এই দাবি আদৌ কি ব্যক্তিগত? নাকি বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রতিফলন? এ প্রশ্ন আজ বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মনে।

চট্টগ্রাম বন্দর ভারতের উত্তর-পূর্বের ‘লাইফলাইন’- এ কথা সবারই জানা। ভারতের সাতটি রাজ্যই ভৌগোলিকভাবে 'চিকেন নেক' নামে পরিচিত একটি সংকীর্ণ করিডর দিয়ে মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বাণিজ্য, পরিবহন, সামরিক সরঞ্জাম- সবকিছুতেই চট্টগ্রাম বন্দর হলে ভারতের উপকার অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়। এ কারণে বহু বছর ধরে বিভিন্ন নীতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত চট্টগ্রাম অঞ্চলে পরোক্ষ প্রভাব বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এ দাবি নতুন নয়, বরং দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মুখে বহুবার উঠে এসেছে।

এদিকে ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যুত এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেছেন, 'চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাকিস্তানি জেনারেল এবং ব্রিগেডিয়ারের উপস্থিতি রয়েছে… আইএসআই তরুণদের রিক্রুট করছে।' তার এই বক্তব্যেই বোঝা যায় বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছে ভারত। 

প্রশ্ন হলো, চট্টগ্রাম বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে মানচিত্র প্রকাশের পরপরই কেনো পাকিস্তান যুক্ত করা হলো? বাংলাদেশকে কি নতুন এক ভারত-পাকিস্তান প্রতিযোগিতার যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর প্রস্তুতি চলছে? নাকি বাংলাদেশের বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ভারত একটি নতুন 'সিকিউরিটি ন্যারেটিভ' দাঁড় করাতে চাইছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযোগ ভারতের রাষ্ট্রীয় রাজনীতির ভিতরের উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আর ভারতের মিত্র শেখ হাসিনার পতনের পর যেভাবে নতুন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠছে, তা ভারতের চোখে স্বস্তিদায়ক নয়।

কারণ, বাংলাদেশ এখন শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং চীন, তুরস্ক, জাপান, ইউরোপ, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও স্বার্থনির্ভর সম্পর্ক বজায় রাখছে।

এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারতের কূটনীতি স্পষ্টভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে। গত দেড় দশক ধরে ভারত বাংলাদেশের ওপর যে প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল, তা এখন আর নেই। এ কারণেই ভারত এখন নানা দিকে চাপ সৃষ্টি করছে।

কখনও সীমান্তে অস্থিরতা, কখনও মিডিয়া ন্যারেটিভ, কখনও উত্তর-পূর্বকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, কখনও বিদেশি শক্তির উপস্থিতির অভিযোগ, আর এখন ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’। এগুলো নিছক ঘটনা নয়। বরং এটি একটি ধারাবাহিক কৌশল, আসন্ন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন