মোঃ শরিফ মিয়া স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের চিনি শিল্পের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জিল বাংলা চিনিকল, যা সুদুর ১৯৫৮ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও হাজার হাজার আখচাষীর জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্য ভুমিকা রেখে চলছে এবং গুণগতমানের জন্য সুপরিচিত হয়ে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংবেদনশীল সরকারি দপ্তরে দেশের সেরা মানের বিশুদ্ধ চিনি সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় স্থাপিত সেই গৌরবময় চিনিকল আগামী ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ রোজ শুক্রবার এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তার ৬৮তম মাড়াই মৌসুমের শুভ উদ্বোধন করতে চলছে,যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান রশিদুল হাসান। এই নতুন মৌসুমে মিল কর্তৃপক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে সাত শতাংশ রিকভারি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মোট ৪ হাজার ৯ শ মেট্রিক টন বিশুদ্ধ চিনি উৎপাদনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত জরাজীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রপাতি এবং কারিগরি ও প্রশাসনিক উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ স্থায়ী জনবলের তীব্র সংকটের কারণে বর্তমানে এক বিরাট চ্যালেন্জের মুখে; কারণ ঘন ঘন যন্ত্রপাতির বিকল হওয়া (ব্রেক ডাউন) এবং মেরামতজনিত দীর্ঘ সুত্রতা কেবল উৎপাদন সক্ষমতাই হ্রাস করছে না বরং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও জ্বালানি ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার ফলে কর্তৃপক্ষকে মৌসুমী জনবল নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিচালনা প্রক্রিয়া বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই লোকসান- মুখি অচলাবস্থা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য শিল্প বিশেষজ্ঞ মহল অবিলম্বে মিলটিকে বি এম আর আই (Balanching,Modernization, Replacement and Expansion) প্রকল্পের আওতায় এনে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে দ্রুত আধুনিকায়ন করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন, যার ফলস্বরূপ চিনি উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চিনির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বিশুদ্ধতার ঘাটতি পূরণে জিল বাংলা চিনিকল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে; পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা চিনিকল গুলোকে ভর্তুকি নির্ভরতা কমিয়ে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করায় এবং আখচাসীদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল আখের জাত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে কাঁচামালের গুণগতমান ও রিকভারি হার বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন।
এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেও কিছুটা আসার সঞ্চয় করেছেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ তরিকুল আলম যিনি একজন প্রথিতযশা রসায়নবিদ হওয়ায় তার বিশেষজ্ঞ জ্ঞান এবং তার তত্ত্বাবধানে এবছর চিনির মান এবং রিকভারি হার বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সকলে গভীর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। যার মাধ্যমে জিল বাংলা চিনিকল অদূর ভবিষ্যতে তার হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করে বিশ্বমানের শিল্প পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন