আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ব্রিটিশ বিচারক ঘোষণা করেছেন, ইসলামকে ‘সমস্যাযুক্ত’ বলা বা এর সমালোচনা করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতায় পড়ে এবং সমতা আইনের অধীনে এটি একটি সুরক্ষিত বিশ্বাস। এই রায়ে প্রথমবারের মতো ‘ইসলাম-সমালোচনামূলক’ মতামত আইনি স্বীকৃতি পেলো যুক্তরাজ্যে, যা ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
ব্রিটেনের এক আদালত গুরুত্বপূর্ণ এক রায়ে ঘোষণা দিয়েছে, ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করাও এখন সমতা আইনের অধীনে সুরক্ষিত মতামত হিসেবে গণ্য হবে।
৬১ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিক লি, যিনি একজন অ্যাকচুয়ারি (অর্থনীতির ঝুঁকি বিশ্লেষক), ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ইসলামের সমালোচনামূলক কয়েকটি পোস্ট দেওয়ার কারণে ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ফ্যাকাল্টি অফ অ্যাকচুয়ারিজ (IFoA) কর্তৃক অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হন।
চার বছরের শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রক্রিয়ার পর তাকে পেশাগত সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং প্রায় ২৩ হাজার পাউন্ড জরিমানা গুণতে হয়।
তবে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে কর্মসংস্থান ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে যে, মিঃ লির “ইসলাম-সমালোচনামূলক” বিশ্বাস Equality Act 2010 বা সমতা আইনের অধীনে সুরক্ষিত। বিচারক ডেভিড খান বলেছেন, লির বক্তব্য ধর্মীয় বিদ্বেষ নয় বরং দার্শনিক মতামত হিসেবে বিবেচিত হবে।
মিঃ লি দাবি করেন, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মের সামাজিক প্রভাব নিয়ে তিনি যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ করেছেন, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ। তিনি বলেন, “ধর্মের নামে অন্যায়ের সমালোচনা করা অপরাধ হতে পারে না।” লির আইনজীবী জানান, এই রায় বাকস্বাধীনতার জন্য এক “ঐতিহাসিক বিজয়” হিসেবে কাজ করবে।
‘ফ্রি স্পিচ ইউনিয়ন’-এর প্রধান লর্ড ইয়ং অফ অ্যাক্টন মন্তব্য করেন, “এই যুগান্তকারী রায় সরকারের জন্য ইসলামোফোবিয়ার কোনো সরকারি সংজ্ঞা প্রণয়ন আরও কঠিন করে তুলবে।” আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ধর্মীয় সমালোচনা সম্পর্কিত অনেক বিতর্কিত মামলা প্রভাবিত করবে।
এই রায় যুক্তরাজ্যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার ভারসাম্য নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। অনেকেই একে বাকস্বাধীনতার বিজয় বললেও, অন্যরা আশঙ্কা করছেন—এটি ইসলামফোবিয়া বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন