হাফিজুর রহমান সাতক্ষীরা ( কালিগঞ্জ) প্রতিনিধি
সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার, কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ভদ্রখালী ভূমি অফিসের তহশীলদার মোকরম হোসেনের বিরুদ্ধে নানাবিধ, অনিয়ম, ঘুষ দুর্নীতি ,স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভুমি মালিক, সেবা গ্রহীতারা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড সাহেবকে একাধিকবার মৌখিকভাবে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি । বরং" মিলেমিশে করি কাজ "হারি জিতি নাহি লাজ"। কারণ এই সমস্ত ভূমি অফিসের সিংহভাগ অনিয়ম, ঘুষ ,দুর্নীতির টাকার ভাগ দিতে হয় বলে নাম না প্রকাশের শর্তে অফিসের কর্মচারীসহ একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান।
ভদ্রখালি ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা জানান ,অনিয়ম, ঘুষ ,দুর্নীতি হয়রানি ,স্বেচ্ছাচারিতা সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে ভদ্রখালী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোকাররম হোসেনে সহ তার অফিসের অফিস সহকারী আলমগীর হোসেন, শহীদ ও তার পোষ্য দালালদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী কয়েকজন ভুমি মালিকরা সাংবাদিক দেখে ছুটে এসে জানান এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না ,।
সরকারি নিয়মে নামজারীর জন্য ১১৭০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ক্ষেত্র বিশেষ ৯ থেকে ২০,হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তহশীলদার এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বিরুদ্ধে। ভূমি অফিসের সামনে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা পুরাতন ইউনিয়ন ভূমি অফিসটিতে স্ত্রী মর্জিনা খাতুনকে নিয়ে বসবাস করলেও মূলত দালালি অফিস হিসাবে সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত দালালদের নিয়ে চলে দহরম ঘুষ বাণিজ্য। সপ্তাহের শেষে মোটা অংকের টাকা নিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সাতক্ষীরার ফিঙড়ী বাড়িতে চলে যায়। এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না । দালাল ছাড়া কাজ করতে হলে তাকে দিনের পর দিন, ওই মাসের পর মাস হয়রানি হতে হবে। এজন্য এখানকার মূল মন্ত্র,নগদ ঘুষ, নগদ কাজ হয়রানি থেকে মুক্তি পাক। ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে জমির কাগজপত্র ত্রুটি দেখিয়ে হয়রানি করতে থাকেন।
দাবি মতে অতিরিক্ত টাকা দিলেই কাজ হয় নিমিষে। তিনি নিজে এবং অফিস সহকারী আলমগীর সহ অন্যান্যরা সহ দালাল। নামজারির জন্য সর্বনিম্ন ৭০০০ টাকা থেকে শুরু করে কাগজপত্র ত্রুটি দেখিয়ে ১০/১৫/২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ফতেপুর গ্রামের নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক হিন্দু ভুমি মালিক জানান তার ২৭ শতক জমির নাম পত্তনের জন্য আলমগীর হোসেন ১০ হাজার টাকা দাবি করে যদিও খাজনা পরিষদ আছে। বিষয়টি রেকর্ড করতে চাইলে অস্বীকার করেন।। কলিযোগা গ্রামের এক ভুক্তভোগী জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৪৫ ধারায় দায়ের করা মামলায় প্রতিবেদন নিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে । টাকা না দিলে ১/৩ মাস ধরে হয়রানি করে মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার নজির রয়েছে।
উপজেলা বিএনপি'র সাবেক সদস্য সচিব ডাঃ শফিকুল ইসলাম জানান আমি নিজেও টাকা না দেওয়ায় এমন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। উওর শ্রীপুর গ্রামের মৃত গোরাই সরদারের এর পুত্র আব্দুল মান্নান জানান নামজারির জন্য তার নিকট থেকে ৯০০০ টাকা নেওয়া ছাড়াও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। ফতেপুর গ্রামের চঞ্চল হাজরা জানান তার সম্পত্তি প্রথমে ব্যক্তি মালিকাধীন হিসেবে খাজনার রশিদ দিলেও পরবর্তীতে উক্ত জমি অন্যান্য নামে মোটা অংকের টাকা নিয়ে খাস অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ইজারা কেসের মাধ্যমে লীজ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ ও একই অভিযোগ করেন তহশিলদার মোবারক ও অফিস সহকারী আলমগীর ও শহীদের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পুকুর এবং ধানের জমি কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং এসিল্যান্ডকে না জানিয়ে বছরের পর বছর স্থানীয় এক ইউ পি সদস্যের নিকট লিজ দিয়ে মোট অংকের টাকা আদায় করে আসছে বলে স্থানীয়রা জানান।
তবে এই সমস্ত বিষয়ের ঘটনার সত্যতা জানার জন্য রবিবার বেলা ১১ টার দিকে তার অফিসে গেলে ব্যস্ততার অজুহাতে কথা না বললেও পরবর্তীতে মোবাইলের মাধ্যমে তিনি ঘুষ অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে এ প্রতিনিধিকে জানান তার অফিসে কোন ঘোষ চলে না সরাসরি নিজের কাজ নিজে করেন। ভূমি অফিসের পুকুর এবং সরকারি জমির কথা স্বীকার করলেও লিজের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তবে পরিত্যক্ত ভবনে স্ত্রী নিয়ে বসবাসের কথা আংশিক স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাসের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানান বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন