সনদ জালিয়াতির অভিযোগে কালীগঞ্জের প্রধান শিক্ষক তদন্তাধীন

হাফিজুর রহমান, কালীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫(বুধবার)
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষায় এক বিস্ময়কর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এসএসসি পাসের আগেই শিক্ষক হিসেবে যোগদান, পরে সনদ জাল করে একাধিকবার আত্মীকরণ (regularization) এবং পরবর্তীতে বিরাট অনিয়মের মধ্য দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস।

৪২ বছর চাকরিজীবনের শেষে অবসরে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সনদ জালিয়াতি করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ
তদন্তসূত্রে জানা যায়—সরাবদিপুর গ্রামের ইসমাইল সরদারের ছেলে হাবিবুর রহমান দাবি করেন যে তিনি ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করে ১৫ মে ১৯৮৩ সালে সরাবদিপুর রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
কিন্তু রেকর্ড বলছে ভিন্ন কথা—
তিনি ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন তারিখে বড়শিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।

অর্থাৎ—
যে সনদ দিয়ে তিনি চাকরিতে ঢুকেছেন, সেটি চাকরির সময় আদৌ ছিল না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন—প্রভাব ও ঘুষের মাধ্যমে সে সময়ের বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে “ম্যানেজ” করেই তিনি শিক্ষকতা বাগিয়ে নেন।

একাধিকবার আত্মীকরণ—যেখানে নিয়মে এটি একবারই হওয়ার কথা
চাকরিতে ঢোকার পর অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয় হাবিবুরের জীবনে।
১৯৮৬: স্কুল জাতীয়করণের সময় তিনি আবারও সনদ জমা দিয়ে আত্মীকরণ করেন।
১৯৯২: দ্বিতীয়বার আত্মীকরণ!
২০০১: আত্মীকরণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই কিভাবে যেন তিনি প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি পান।
২০০৭: তৃতীয়বার আত্মীকরণ!

একজন শিক্ষক চাকরিজীবনে একবারই আত্মীকরণের সুযোগ পান। কিন্তু হাবিবুর রহমান তিন-তিনবার আত্মীকরণের সুযোগ পেয়েছেন—যেটি সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।

উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা নাজিমউদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন—
“সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি কিভাবে বারবার আত্মীকরণ করলেন? কিভাবে প্রধান শিক্ষক পদ পেলেন? এবং এতদিন ধরে বেতন-ভাতা তুললেন—এটা প্রশাসন চেয়ে দেখল না কেন?”

তদন্তপত্র খুলনা বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো
১০ নভেম্বর দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস হাবিবুর রহমানের জমাকৃত সনদ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। বিষয়টি এখন খুলনা বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিসে তদন্তাধীন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো—
আগামী ডিসেম্বরেই হাবিবুর এলপিআর-এ গিয়ে পেনশন নিতে প্রস্তুত।
এর আগেই তদন্ত শুরু হওয়ায় তার সার্টিফিকেট জালিয়াতি, অতিরিক্ত বেতন গ্রহণ, পদোন্নতির বৈধতা—সবই এখন আইনি ঝুঁকিতে পড়েছে।

প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া—‘তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা’
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান।
অভিযোগ অস্বীকার করে সমস্ত দায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
তবে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হননি—উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন